Thursday 28 September 2017

প্রতারনা

মেয়েটির সাথে প্রথম যেদিন দেখা সেদিন অনেক রাত। ১ টা কি ১.৩০ বাজে। অফিসে প্রচুর কাজের চাপ ছিল। তাই বাসায় ফিরতে দেরী হলো। বাসা থেকে খানিক দূরে। একটা মেয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এত রাতে একটি মেয়ে। চুল গুলো অগোছালো। জামার হাতার একপাশে ছেড়া। ঠোঁটের কোন বেয়ে রক্ত পড়ছে। কপাল থেকেও। হাত পা কাঁপছে। বলল আমাকে একটু সাহায্য করুন। প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করুন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনার কি হয়েছে?



–আমি খুব বিপদে পড়েছি। আমাকে বাঁচান প্লিজ।
–কি হয়েছে খুলে বলুন।
–কত গুলো ছেলে আমাকে রেপ করার চেষ্টা করেছিল, আমি পালিয়ে এসেছি।
–চলুন থানায় যাই।
–না না। আমি চাইনা আমার জন্য আমার ফ্যামিলির কোন বদনাম হোক।
–চলুন তাহলে আপনাকে বাসায় দিয়ে আসি।
–না না, কেউ দেখলে প্রবলেম হবে।
–তাহলে কীভাবে সাহায্য করবো?
–যদি কিছু মনে না করেন, আমাকে কিছু টাকা ধার দিবেন? কথা দিচ্ছি ফেরত দিয়ে দেবো।

আমি ওকে মানিব্যাগ থেকে সাথে সাথে টাকা বের করে দিলাম। কেন জানি ওকে বিশ্বাস হল। মনে হল টাকা না দিলেও সমস্যা কি। কাউকে সাহায্য তো করতে পারলাম। আমি ওকে এক হাজার টাকা ও সাথে মানিব্যাগে থাকা যত খুচরো টাকা ছিল সব দিয়ে দিলাম। ও বলল
–আমি সত্যিই আপনার টাকা ফেরত দিবো। বিশ্বাস করতে পারেন।
–সে ঠিকাছে। আপনি কোথায় যাবেন? চলুন সিএনজি ঠিক করে দেই। বাসা কোথায় আপনার?
–এখানে বড় ফুপুর বাসায় থেকে লেখা পড়া করি। গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর।
বলুন না আপনার টাকা কীভাবে ফেরত দিবো।
–দিয়েন কখনো আবার দেখা হলে।
–না প্লিজ আমি আপনার টাকাটা ফেরত দিতে চাই।

আমি পকেট থেকে অফিসের একটা কার্ড বের করে দিলাম। বললাম পেছনে আমার মোবাইল নাম্বার আছে।
খানিক বাদে একটা সিএনজি সামনে এলো। ও সেটাতে উঠে পড়ল। আমাকে বলল ধন্যবাদ, আসি।
ওর বাসাটা কোথায় শোনা হলো না। আমি বাসায় চলে আসলাম।

ঠিক দুই দিন পর রাতে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো। সেই মেয়েটি। মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দর কণ্ঠটা ও বেশ সুরেলা। বলল আপনাকে টাকাটা দিতে চাই। আমি বললাম এ কথা বলার জন্য কল দিয়েছেন।
– জি মানে।
– তা কত টাকা যেন?
– এক হাজার দুশো পঁচাত্তর টাকা মাত্র।
– হাহাহা তাই?
– হুম। আর আপনি কেমন আছেন তাই শুনতে কল করেছি।
– আমি ভালোই। আপনি?
– জি আপনার জন্য ভালোই আছি। দেখা কবে করবেন বলুন?
–আমি অফিসের কাজে একটু বিজি আছি। কিছু দিন পর দেখা করি।
–আচ্ছা। কিন্তু আপনার টাকাটা লাগে যদি।
– না লাগবে না। ওটা আপনার কাছে জমা থাক।আমার কাছে আসলে তো খরচ হয়ে যাবে।

ও হেসে ফেলে। এই মেয়ের হাসিও তো অনেক সুন্দর। আমাদের প্রায় প্রতিদিনই কথা হতে থাকে। কাজের চাপে দেখা করা হয়ে ওঠে না। দুই মাস অতিবাহিত হয়। আমি তার প্রতি উইক হয়ে পড়ি, এক কথায় তাকে ভালোবেসে ফেলি। কি যেন মায়া আছে সব কিছুতে। ওকে প্রপোজ ও করে ফেলি। ও রাজি হয়ে যায়। ঠিক করি মাসের শেষে কাজের চাপ কমে যাবে। বৃহস্পতিবার তাড়াতাড়ি অফিস ও ছুটি ওই দিন দেখা করবো। দীর্ঘ দুই মাস পর দেখা। দুই মাস বেশি কিছু না তাও আমার কাছে দুই বছর মনে হলো। তারপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমি খুব এক্সসাইটেড ছিলাম। মেয়াটা মানে আমার ভালোবাসার মানুষ টা নীল একটা শাড়ি পরে এসেছিল। মনে হচ্ছিলো যেন আকাশ থেকে নীল পরী এসেছে। ও বলল চলো কোথাও নিরিবিলি জায়গায় বসি গিয়ে। ঠিক করলাম নদীর পাড়ে যাবো। গেলাম ও নদীর পাড়ে। জায়গাটা খুব সুন্দর আর নিরিবিলি ও। খানিকক্ষণ গল্প করলাম।আমাকে টাকা টা দিলো। নিতে চাইনি তাও জোর করে দিলো। তারপর ব্যাগ থেকে একটা ছোট টিফিন বক্সের মত বের করলো তাতে আমার পছন্দের গাজরের হালুয়া। ছোট বেলায় মা রেঁধে খাওয়াতো। মা চলে যাওয়ার পর থেকে আর খাওয়া হয়নি। সে ফুপুর চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিজ হাতে আমার জন্য রেঁধে এনেছে। জোর করে সব খাওয়ালো।
তারপর..... তারপর আর কিছু মনে নেই।

আমার সাথে থাকা ল্যাপটপ, মাসের ফুল বেতন, মোবাইল সব নিয়ে গেছে। স্থানীয় কিছু জেলে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার বলল আর একটু দেরী হলে আমাকে বাঁচানো যেন না। ওষুধের যে মাত্রা ছিল তা খুব সামান্য তাতেই আমার খুব খারাপ অবস্থা।
ও বলেছিল ওর নাম মায়া। আসলে নামটা সত্যি নাকি ওর বানানো তা জানি না। তাই নামটা শেষে বললাম। এখনও ওকে খুঁজি। আর ওই ঘটনার পর থেকে কোনও মেয়েকেই বিশ্বাস হয় না।

Collected


* আপনার কবিতা এই ওয়েবসাইট এ প্রকাশ করতে চাইলে আপনার ফেসবুক প্রোফাইল লিংক ও কবিতা আমাদের কে ইমেইল করুন: itinfoworld.xyz@gmail.com

No comments:

Post a Comment

Attention: You can give your advice and opinion only this comment box. But do not try to any kind of spamming.